সম্প্রতি কিছুদিন আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjungha Express)-এর দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার তদন্তের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। রেলের তদন্তকারীরা তাদের কাজ শুরু করার পর একাধিক নতুন তথ্য হাতে পেয়েছে। তাদের তদন্তের ভিত্তিতে যে তথ্য সামনে এসেছে তা চাঞ্চল্যকর।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjungha Express) যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটায় সেখানে রাঙাপানি ও ট্রেনের দূরত্বের মধ্যে তিনটি রেলগেট ছিল। রেলগেটের রকি দুর্ঘটনার কিছু আগে রাঙাপানি স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছিলেন একই লাইনে একটি মাল গাড়ি আসছে যার গতিবেগ অনেক বেশি। কিন্তু এই খবরটি সিস্টেম খারাপ থাকার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালককে জানানো হয়নি।
যোগাযোগের জন্য স্টেশন মাস্টার এই বিষয়ে ইন্টার্নাল সিস্টেমের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই সিস্টেমের মাধ্যমে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তার ফোনে যোগাযোগ করার কথা ভাবছিল তারা। কিন্তু সেই সুযোগ আর পাওয়া যায়নি। ফোন করার আগেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে (Kanchanjungha Express) ধাক্কা মেরেছিল দ্রুত গতিতে আসা ওই মালগাড়িটি।
এই দুর্ঘটনার তদন্ত নেমে রেল তদন্তকারীরা একাধিক রেল কর্মীর বয়ান রেকর্ড করেছেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনার দিন সেই মাল গাড়ির ইঞ্জিনে কোনরকম যান্ত্রিক ত্রুটি তৈরি হয়েছিল কিনা সেই বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই মালগাড়ির ইঞ্জিনের মেকানিক্যাল ফরেন্সিক টেস্ট করানো হচ্ছে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনার ব্যাপারে একাধিক জন অনেক রকম মন্তব্য করেছে। এই বিষয়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সিইও জয়া বর্মা (Jaya Varma Sinha) নিজের মতামত হিসেবে জানিয়েছিলেন যে, মানুষের ভুলের কারণে এদের ঘটনাটি ঘটে। লাল সিগনাল অমান্য করে মাল গাড়িটি এগিয়ে যাওয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjungha Express) এর সঙ্গে সেটি ধাক্কা মারে। কিন্তু পরে জানা যায় যে এই লাইনে কিছুদিন ধরে সিগন্যাল গোলমাল করছিল।
কয়েকদিন ধরে ট্রেন চলাচল করছিল পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট বা ‘কাগুজে সিগন্যাল’-এর মাধ্যমে। যে মাল গাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে (Kanchanjungha Express) ধাক্কা মেরেছিল তার কাছে নাকি পেপল লাইন ক্লিয়ার টিকিটে লাল সিগনাল অতিক্রম করার অনুমতি ছিল। অর্থাৎ এর ওই মাল গাড়ি চালকের ধীরগতিতে লাল সিগন্যাল পেরিয়ে দেওয়ার অনুমতি ছিল। এই অবস্থায় ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মাল গাড়ির চালককে রিপোর্ট অনুযায়ী, টি/এ৯১২ সংখ্যক ‘পিএলসিটি’ ইস্যু করা হয়েছিল। সেই কাগুজে সিগন্যাল দিয়েছিলেন রঙ্গপানির স্টেশন মাস্টার। সেই টিকিট অনুযায়ী রঙ্গপানি রেল স্টেশন এবং ছত্তরহাট জংশনের মধ্যে যতগুলি অটোমেটিক সিগন্যাল আছে, এই টিকিট অনুযায়ী সেই সিগনাল গুলি পার করা যাবে তবে তার একটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এই কাগুজে সিগন্যাল ব্যবহার করলে প্রতি অটোমেটিক সিগন্যালে চালককে দিনের বেলায় ১ মিনিট করে অপেক্ষা করতে হবে। আর তারপরে ১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে এগিয়ে যেতে হবে। দুর্ঘটনার দিন মালগাড়ি চালকের লাল সিগনাল অতিক্রম করার অনুমতি ছিল তবে খুবই ধীরগতিতে অতিক্রম করতে হতো। কিন্তু এই নিয়ম অমান্য করে মাল গাড়িটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। কেন মাল গাড়ির চালক এমনটি করেছে সে ব্যাপারে এখনো জানা যায়নি। এই দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হলে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।